আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-আর্ক নির্বাপণ পদ্ধতি ।যা “সার্কিট ব্রেকারের গঠন ও কার্যপ্রণালি” অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
আর্ক নির্বাপণ পদ্ধতি
আর্ক নির্বাপণ পদ্ধতি :
সার্কিট ব্রেকারের মুভিং কন্টাক্টসমূহে সৃষ্ট আর্ক দ্রুত নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ত্রুটিপূর্ণ অত্যধিক মাত্রার কারেন্ট প্রবাহ বন্ধ হবে না। এতে সিস্টেমে সংযুক্ত মূল্যবান যন্ত্রপাতিসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব সার্কিট ব্রেকারের আর্ক নির্বাপণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। দুটি পদ্ধতিতে আর্ক নির্বাপণের ব্যবস্থা করা যায়। যথা-
(ক)উচ্চ রোধ পদ্ধতি (High Resistance Method) (খ) কারেন্ট শূন্যমান পদ্ধতি (Current Zero Method)।
(ক) উচ্চ রোধ পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে আর্ক রেজিস্ট্যান্স সময়ের সাথে বৃদ্ধি করা হয় বলে আর্ক পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে না, ফলে আর্ক নির্বাপিত হয়। এ পদ্ধতির প্রধান অসুবিধা হলো বিপুল পরিমাণ শক্তি আর্কে অপচয় হয়।
কাজেই বেশি পরিমাণ যান্ত্রিক শক্তি সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন সার্কিট ব্রেকার ডিজাইন করার প্রয়োজন হয়। এ কারণে পদ্ধতিটি শুধুমাত্র ডিসি সার্কিট ব্রেকার এবং নিম্ন ও মধ্যম ক্ষমতাসম্পন্ন এসি সার্কিট ব্রেকারে ব্যবহার করা হয়।
নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলোর সাহায্যে আর্ক রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি করা যায়-
(i) আর্কের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করেঃ
আৰু রেজিস্টাপ (Y) আর্কের দৈর্ঘ্যের সাথে সরাসরি (i) আর্ক (Tare – সমানুপাতিক। তাই কন্টাক্ট-এর মধ্যকার ফাঁক বৃদ্ধি করে আর্কের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা যায়। এতে বেশি পরিমাণ আর্ক রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয়। কিন্তু উচ্চ ভোল্টেজের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব নয় ।
(ii) আর্ক ঠাণ্ডাকরণ প্রক্রিয়া :
আর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর এর চারদিকের আয়োনাইজড় মাধ্যমকে ঠাণ্ডা করলে এটি ডি-আয়োনাইজড হয়। এতে আর্ক পথের (Are Path) রোধ বৃদ্ধি পায় এবং সহজে আর্কা নির্বাপিত হয়। আর্ক বরাবর ঠাণ্ডা গ্যাস বা বায়ুর চাপ প্রয়োগ করে সুষ্ঠুভাবে আর্ক পথ ঠাণ্ডা করা যায়।
(iii) আর্কের প্রস্থচ্ছেদ কমিয়ে :
যদি আর্কের প্রস্থচ্ছেদ কমিয়ে দেওয়া যায় তবে আর্ককে বজায় রাখার জন্য যে ভোল্টেজের প্রয়োজন হয় তার মান বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, আর্ক পথের রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়। আর্কের জন্য একটি সরু পথের ব্যবস্থা করে অথবা কন্টাক্টসমূহের ক্ষেত্রফল হ্রাস করে আর্কের ক্ষেত্রফল কমানো যায়। এতে আর্ক পথের রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায় এবং আর্ক নির্বাপণ সহজ হয়।
(iv) আর্ককে বিভক্ত করে :
এ পদ্ধতিতে আর্কের দৈর্ঘ্যকে বৃদ্ধি করা হয় এবং স্পিলিটার (Spliter)-এর সাহায্যে আর্ককে বিভক্ত করা হয়।স্পিলিটারসমূহ বিশেষ ধরনের ফাইবার গ্লাস দিয়ে নির্মিত। স্পিলিটারসমূহ আর্ক পথের বরাবরে উল্লম্বভাবে স্থাপন করা হয়।
একটি চুম্বকক্ষেত্র এমনভাবে আর্কের উপর প্রয়োগ করা হয় যেন তা আর্ককে উপরের দিকে আকর্ষণ করে টেনে নেয়। ফলে আর্ক উপরের দিকে উঠে যায় এবং আর্কের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় ও একই সাথে কয়েকটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায় এবং ঠাণ্ডা হয় । ফলস্বরূপ আর্ক পথের রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায় ও তাড়াতাড়ি আর্ক নিভে যায় ।
(খ) কারেন্ট শূন্যমান পদ্ধতি (Current Zero Method) :
আর্ক নির্বাপণের এ পদ্ধতি এসি সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং তা খুবই উপযোগী। ডিসি-র চেয়ে এসি-র বেলায় আর্ক নির্বাপণ কিছুটা সহজতর। কারণ এসি-তে প্রতি সাইকেলে কারেন্ট ওয়েভ দু’বার শূন্য হয়ে যায়। সার্কিট ব্রেকার কন্টাক্টসমূহ সাময়িকভাবে ঠাণ্ডা হওয়ার সুযোগ পায়। কারেন্ট ওয়েভের প্রত্যেক শূন্যমানে ক্ষণিকের জন্য আর্ক ক্রমশ অন্তর্হিত (Vanish) হয়ে যায়।
কন্টাক্ট-এর আশপাশে এ সময় আয়ন ও ইলেকট্রন থাকে এবং কন্টাক্ট-এর চারপাশের মাধ্যমের ডাই- ইলেকট্রিক শক্তিও কম থাকে। কিন্তু কারেন্ট ওয়েভের উত্থানের সাথে সাথে এ দুর্বল ডাই-ইলেকট্রিক শক্তি নষ্ট হয়ে যায় এবং আর্কের পুনঃআবির্ভাব ঘটে। কাজেই কারেন্ট ওয়েভের শূন্যমানের সময় যদি আর্ককে পুনঃজীবিত হতে বাধা দেওয়া যায় তবে অতি সহজে আর্ক নির্বাপণ করা যায়।
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে এ কাজগুলো করা যায়-
(i) কারেন্ট ওয়েভ শূন্যমানে আসার সাথে যদি কন্টাক্টসমূহের ফাঁকের মধ্যে আয়োনাইজ্ড মাধ্যমকে সরিয়ে দিয়ে নতুন মাধ্যম (তেল, বায়ু, বা SF, গ্যাস) দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাহলে কন্টাক্টদ্বয়ের মধ্যে ডাই-ইলেকট্রিক শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং আর্ক পুনঃজীবিত হতে পারে না।
(ii) কারেন্ট ওয়েভ শূন্য হওয়ার সাথে সাথে আর্ক পথে কন্টাক্টদ্বয়ের মধ্যে উচ্চ চাপের গ্যাস প্রবাহ ঘটিয়ে আর্কের মধ্যকার গরম গ্যাসকে সরিয়ে দিয়ে আর্ক নির্বাপণ করা যায়।
আরও দেখুনঃ