ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্দেশ্যাবলী | অধ্যায়-১ | ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্দেশ্যাবলী যা অধ্যায়-১ এর ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এ অন্তর্ভুক্ত। এটি চার বছর মেয়াদি কোর্সের আলোকে লেখা হয়েছে। ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের বিভিন্ন ইংরেজি বই অনুসরণ করেই রচনা করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের যে-কোন বই সম্পূর্ণরূপে বাংলা ভাষায় রচনা করা সম্ভব নয়। এজন্যে কিছু কিছু ইংরেজি শব্দকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়নি। ফলে ছাত্রছাত্রীদের হয়ত কিছুটা অসুবিধা হতে পারে।

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্দেশ্যাবলী

 

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্দেশ্যাবলী

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্দেশ্যাবলী

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এমন একটি সফটওয়্যার সিস্টেম, যার সাহায্যে ডাটাবেস-এ জমাকৃত ডাটাকে সূত্থরূপে ম্যানিপুলেট করা সম্ভব। একে সংক্ষেপে DBMS বলা হয়। DBMS এর নানাবিধ উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে এর অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হল- কম্পিউটার সিস্টেমে এমন একটি পরিবেশ (Environment) সরবরাহ করা, যাতে ডাটাবেসে অত্যন্ত সুবিধাজনকভাবে (Conveniently) ও দক্ষতার সাথে (Efficiently) প্রচুর পরিমাণ তথ্য জমা (Store) ও উদ্ধার কার্য (Retrieve) সম্পন্ন করা যায়।

তাছাড়া কনভেনশনাল (Conventional) ফাইল সিস্টেমের নানাবিধ অসুবিধা দূর করাও DBMS এর প্রধান উদ্দেশ্য। নিম্নে এর প্রধান প্রধান উদ্দেশ্যগুলো বর্ণনা করা হলঃ

(ক) ডাটাতে সহজ প্রবেশ (Easy access) এর ব্যবস্থা করাঃ

নানাবিধ কারণে কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম-এ সুবিধাজনকভাবে ও দক্ষতার সাথে ডাটা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। যেমন- এতে ফাইল ফরম্যাট নানা ধরনের থাকে এবং বিবিধ প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে শর্ত জুড়ে দিয়ে ডাটা তল্লাশী করা যায় না। ফলে ডাটা অ্যাকসেস অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। DBMS, এ অসুবিধা দূর করে থাকে। ডাটাবেস ব্যবহারকারীগণ যাতে অত্যন্ত দ্রুত ও সহজে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডাটা অ্যাকসেস করতে পারে, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তার ব্যবস্থা করে।

(খ) ডাটা আইসোলেশন (Isolation) জনিত অসুবিধা দূরীকরণঃ

কনভেনশনাল ফাইলের ফরম্যাট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এমনকি একই ভাটা বিভিন্ন ফাইলে বিভিন্ন ফরম্যাটে ছড়ানো-ছিটানো (Scattered) অবস্থায় বিরাজ করে। এজন্য ডাটা সঠিকভাবে উদ্ধার করার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট ব্যবহার করে নতুন অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম রচনা করা সম্ভব হয় না। DBMS-এ ধরনের অসুবিধা মোটেও দেখা যায় না। অর্থাৎ DBMS দ্বারা এটি দূরীভূত হয়েছে। কারণ এতে ফাইল ফরম্যাট ভিন্ন ভিন্ন হয় না এবং ডাটাও ছড়ানো-ছিটানো থাকে না। কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেমের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অসুবিধা।

(গ) ইন্টিগ্রিটি অসুবিধা (Integerity problem) দূরীকরণ:

ডাটাবেসে জমাকৃত ডাটাকে অবশ্যই কিছু কিছু কনসিসটেন্সি কনস্ট্রেইন্টস (Consistency constraints) পালন করতে হবে। যেমন- কোন অ্যাকাউন্টে ২৫০ টাকার কম জমা রাখা যাবে না। প্রোগ্রামারগণ উপযুক্ত কোড (Code) সংযুক্ত করে এ ধরনের কনস্ট্রেইন্ট মানতে সিস্টেমকে বাধ্য করে থাকেন। কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেমে এটি সম্ভব হয় না। কারণ এতে ফাইল ফরম্যাট ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। DBMS এর মাধ্যমে এ অসুবিধা দূর করা হয়েছে। কেননা এতে ফাইল ফরম্যাট ভিন্ন ভিন্ন না হওয়ায় এ ধরনের কনস্ট্রেইন্ট পালন করানোর জন্যে কোড লেখা খুবই সহজ হয়েছে।

(ঘ) ডাটা রিডানডেনসি (Redundancy) ও ইনকনসিসটেন্সি (Inconsistency) অসুবিধা দূরীকরণঃ

যেহেতু কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেমে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামারগণ ফাইল ও অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম রচনা করে থাকে, সেহেতু এতে ফাইল ফরম্যাট বিভিন্ন হয় এবং প্রোগ্রামসমূহ বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়। তাছাড়া একই তথ্য বিভিন্ন ফাইলের বিভিন্ন স্থানে হুবহু জমা হয়, একে ডাটা রিডানডেনসি বলে। যেমন একজন কাস্টমারের টেলিফোন নম্বর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা থাকতে পারে। ফলে সিস্টেমের স্টোরেজ বেশি ব্যবহৃত হবে এবং খরচ বৃদ্ধি পাবে। DBMS-এর সাহায্যে এ ধরনের অসুবিধা দূর করা হয়েছে।

এ ছাড়াও রিডানডেনসি অসুবিধা ইনকনসিসটেন্সি নামক অপর একটি অসুবিধার সৃষ্টি করে। যেমন- উক্ত কাস্টমারের টেলিফোন নম্বর একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ডিলিট (Delete) করা হলেও তা অন্য অ্যাকাউন্টে থেকে যাবে। ফলে একই ব্যক্তির তথ্য বিভিন্ন রকম হবে। DBMS-এ এ ধরনের কোন অসুবিধা নাই।

 

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্দেশ্যাবলী

 

(ঙ) অ্যাটমিসিটি (Atomicity) অসুবিধা দূরীকরণ:

কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক মেশিন। এটি অন্যান্য মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল মেশিনের মতো যে কোন সময় কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু এতে জমাকৃত ডাটা অত্যন্ত মূল্যবান। এ জন্যই কার্যকারিতা হারানোর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ডাটাবেস এর ডাটা ব্যাকআপ (Back up) ও রিকভারি (Recovery)-এর ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক।

বিশেষ করে যখন ডাটা ট্র্যানজ্যাকশন (Transaction) সংঘটিত হয়, তখন ব্যর্থতার পূর্বমুহূর্তে ট্র্যানজ্যাকশন সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে অর্থাৎ ট্র্যানজ্যাকশন অ্যাটমিক (Atomic) হতে হবে। কনভেনশনাল সিস্টেমে এটি মোটেও সম্ভব নয়। কিন্তু DBMS-এ এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ DBMS-এ ব্যাকআপ ও রিকভারি ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত।

(চ) একই সময়ে ডাটাবেসে প্রবেশের ফলে সৃষ্ট অসুবিধা দূরীকরণ (To remove concurrent access anomalies) :

ইনকনসিসটেন্সি দূর করা DBMS এর একটি বড় ধরনের উদ্দেশ্য। কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেমে একটি ডাটাবেসে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ (Access) করতে পারে এবং ডাটাবেস মডিফাই বা সংশোধন করতে পারে। এর ফলে ডাটাবেসে ইনকনসিসটেন্সি (Inconsistency) বা অসংলগ্নতা দেখা দেয়। এজন্য ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একই ডাটাবেসে একই সময়ে একাধিক ব্যবহারকারীকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করে না। ফলে এতে ইনকনসিসটেন্সি অবস্থার সৃষ্টি হয় না।

এভাবেই DBMS ডাটাবেসকে ইনকনসিসটেন্সি বা অসংলগ্নতার কবল থেকে রক্ষা করে থাকে। ফলে ব্যবহারকারীগণের নিকট ডাটাবেসের গ্রহণযোগ্যতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।

 

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্দেশ্যাবলী

 

(ছ) ডাটা নিরাপত্তা (Security) প্রদান করা:

ডাটাবেসে ডাটা নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকলে যে কোন অননুমোদিত (Unauthorized) ব্যক্তি ডাটাতে প্রবেশ (Access) করে তা আংশিক অথবা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিতে পারে। এ জন্য ডাটার নিরাপত্তা বিধান করা DBMS এর একটি বড় উদ্দেশ্য। সাধারণতঃ একটি ডাটাবেসের সব অংশে সকল ব্যবহারকারীর প্রবেশ ও সংশোধনের প্রয়োজন হয় না। তাই ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডাটাবেসে ব্যবহারকারীদের প্রবেশ (Access), ভিউ (View) এবং মডিফিকেশন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবহারকারীকে প্রয়োজন অনুযায়ী অধিকার (Right) প্রদান করা হয়। ফলে একজন ডাটাবেস ব্যবহারকারী শুধুমাত্র – তাকে প্রদত্ত অধিকার (Right) অনুযায়ী ডাটা প্রবেশ (Data access), ভিউ (View) ও মডিফিকেশন (Modification) করতে সক্ষম হয়। এভাবে DBMS ডাটাবেসের গোপনীয়তা (Privecy) ও নিরাপত্তা (Security) নিশ্চিত (Ensure) করে থাকে। কিন্তু কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে এটি সম্ভব হয় না।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment