অয়েল সার্কিট ব্রেকার

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-অয়েল সার্কিট ব্রেকার ।যা “সার্কিট ব্রেকারের গঠন ও কার্যপ্রণালি” অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

অয়েল সার্কিট ব্রেকার

 

অয়েল সার্কিট ব্রেকার

 

যে সার্কিট ব্রেকারে আর্ক নির্বাপণের মাধ্যম হিসেবে অর্থাৎ ডাই-ইলেকট্রিক (মেটিরিয়াল) হিসেবে বিশেষ ধরনের ডাই-ইলেকট্রিক তেল ব্যবহৃত হয়, তাকে অয়েল সার্কিট ব্রেকার বলে। বান্ধ অয়েল মাধ্যম 72.5 কিলোভোল্ট থেকে 245 কিলোভোল্ট লাইনে ব্যবহার করা হয়।

আর্ক নির্বাপণের মাধ্যম হিসেবে তেলের সুবিধা-অসুবিধাসমূহঃ

তেল ভালো ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে বলে লাইভ (Live) কন্ডাক্টর এবং আর্থ কম্পোনেন্ট এর মাঝে দূরত্ব কম রাখা যায়।

ওয়েল সার্কিট ব্রেকার (Oil Circuit Breaker-OCB) : অয়েল সার্কিট ব্রেকার দুই ধরনের হয়, যথা :

(i) সিঙ্গেল ব্রেক ওয়েল সার্কিট ব্রেকার :

চিত্রে সিঙ্গেল ব্রেক অয়েল সার্কিট ব্রেকার দেখানো হলো। কারেন্ট প্রবেশ এবং নির্গমন টার্মিনাল বুশিং এর মারফতে হয়। এক্ষেত্রে বুশিং এর মধ্যস্থিত একটি ইলেকট্রোডে কারেন্ট প্রবেশ করে স্থির কন্টাক্ট ও মুভিং কন্টাক্ট হয়ে অন্য বুশিং এর মধ্যস্থিত ইলেকট্রোড দিয়ে বেরিয়ে যায়। ড্রাইভিং মেকানিজম চলমান কন্টাক্টকে অপারেট করলে তখন একটিমাত্র পয়েন্ট ব্রেক করে বিধায় একে সিঙ্গেল ব্রেক অয়েল সার্কিট ব্রেকার বলা হয়।

 

অয়েল সার্কিট ব্রেকার

 

(ii) ডাবল ব্রেক ওয়েল সার্কিট ব্রেকারঃ

একটি আবহাওয়ারোধক মজবুত ইস্পাতের ট্যাংকের সাহায্যে এটি তৈরি করা হয় এবং ট্যাংকের চারদিকে ইনসুলেটিং লাইনিং দেওয়া থাকে। ট্যাংকটি ট্রান্সফরমার তেল দিয়ে ভর্তি করা থাকে। ব্রেকারের চলমান কন্টাক্ট ও স্থির কন্টাক্টসমূহ ট্যাংকের তেলের মধ্যে ভালোভাবে ডুবানো থাকে।

সার্কিটের স্বাভাবিক অবস্থায় চলমান কন্টাক্টগুলো স্থির কন্টাক্ট এর সাথে সংযুক্ত থাকে। অস্বাভাবিক অবস্থায় বেশি কারেন্ট প্রবাহের ফলে ট্রিপ কয়েলের মাধ্যমে চলমান কন্টাক্টকে বিপরীত দিকে নিয়ে সার্কিটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এ সময় চলমান কন্টাক্ট এর উভয় পয়েন্টই একই সময়ে স্থির কন্টাক্ট হতে বিচ্ছিন্ন হয় বিধায় একে ডাবল ব্রেক সার্কিট ব্রেকারও বলা হয় ।

শর্ট সার্কিট অবস্থায় কন্টাক্ট বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেই সৃষ্ট প্রচণ্ড আর্ক, তেলের মাধ্যমে নির্বাপিত হয়। এ ব্রেকারের ট্যাংকে রক্ষিত তেল আর্ক নির্বাপণ ও ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে। যেহেতু এ ব্রেকারে অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, শুধুমাত্র তেলের স্বাভাবিক চাপেই আর্ক নির্বাপিত হয়, তাই একে প্লেন ব্রেক অয়েল সার্কিট ব্রেকার বলে।

আর্কজনিত উত্তাপে যে গ্যাস ও বুদবুদের সৃষ্টি হয়, তা বের করে দেওয়ার জন্য ট্যাংকের উপরিভাগে একটি ভেন্ট পাইপ লাগানো থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, কন্টাক্ট বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় সৃষ্ট আর্কজনিত উত্তাপ এত বেশি হয় যে (প্রায় 5000° কেলভিন) তাতে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরকজাতীয় গ্যাস সৃষ্টি হয় এবং এগুলো বের করার ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা থাকে।

চলমান কন্টাক্টসমূহ বিচ্ছিন্ন হওয়া শুরু করলে আর্কের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে গ্যাস উৎপত্তির হার কমতে থাকে। কন্টাক্টগুলোর দূরত্ব যখন একটা নির্দিষ্ট মানে (Critical value) প্রাপ্ত হয় এবং আর্কের কারেন্ট যখন ঐ অবস্থায় শূন্যমানে পৌঁছে, তখন আর্ক নির্বাপিত হয়। এতে আর্ক নির্বাপণের জন্য অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ও অবাঞ্ছিত সময়ের প্রয়োজন হয়।

 

অয়েল সার্কিট ব্রেকার

 

বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে চলমান কন্টাকগুলোকে স্থির কন্টাক্ট হতে এত দূরে সরিয়ে নিতে হয় যে, এটি বাস্তব ক্ষেত্রে ঝামেলাপূর্ণ। আক নির্বাপণের এ অসুবিধা থাকায় সাধারণত 11KV, 150 MVA এর অধিক সিস্টেমে এ ব্রেকার ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত কম ক্ষমতাসম্পন্ন সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে তিনটি ফেজ একই ট্যাংকে রাখার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বেশি পাওয়ারের ক্ষেত্রে তিনটি ফেজকে তিনটি আলাদা ট্যাংকে রাখার ব্যবস্থা থাকে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment