আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেম এবং ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য যা অধ্যায়-১ এর ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এ অন্তর্ভুক্ত। এটি চার বছর মেয়াদি কোর্সের আলোকে লেখা হয়েছে। ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের বিভিন্ন ইংরেজি বই অনুসরণ করেই রচনা করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের যে-কোন বই সম্পূর্ণরূপে বাংলা ভাষায় রচনা করা সম্ভব নয়। এজন্যে কিছু কিছু ইংরেজি শব্দকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়নি। ফলে ছাত্রছাত্রীদের হয়ত কিছুটা অসুবিধা হতে পারে।
কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেম এবং ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য
কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেম এবং ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য
কনভেনশনাল (Conventional) শব্দের অর্থ হল গতানুগতিক বা একটি সনাতন পদ্ধতি। অতএব বলা যায় যে, গতানুগতিক ক প্রচলিত নিয়মে যদি কোন ফাইল প্রসেসিং বা প্রক্রিয়া করা হয়, তবে তাকে বলে কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম। আবার অন্যভাবে বলা যায় যে, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার না করে যদি গতানুগতিক বা প্রচলিত নিয়ম ব্যবহার করে কোন। ফাইল প্রসেস করা হয়, তবে তাকেই কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং বলে। ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি চালু হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ ১৯৭০ সালের পূর্বে এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে।
কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম অনেকগুলো ফাইল নিয়ে গঠিত হয়। বিভিন্ন প্রোগ্রামার অনেক সময় ও শ্রম দিয়ে এ ফাইল তৈরি করে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন জন প্রোগ্রাম রচনার সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষাও ব্যবহার করে থাকেন। ফলে এ ফাইল • প্রসেসিং পদ্ধতিতে ফাইল ফরম্যাট ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই একটি সাধারণ ফরম্যাটে রচিত প্রোগ্রাম দ্বারা সিস্টেমে ডাটা ইনসার্ট (Insert), ডিলিট (Delete), মডিফিকেশন (Modification), কুয়েরী (Query) ইত্যাদি কার্য পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
তাছাড়া ঐ একই কারণে অনায়াসে ও দক্ষতার সাথে ডাটা ম্যানিপুলেট (Manipulate) করা সম্ভব হয় না। কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম মূলতঃ কনভেনশনাল অপারেটিং সিস্টেমের উপরই নির্ভরশীল হয়ে থাকে। ফলে এর স্বকীয়তা বলতে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু থাকে না।
কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম, ডাটার ট্র্যাক (Track) সংরক্ষণ করতে পারে না। এ জন্য কিভাবে এবং কোথায় ডাটা জমা (Store) হচ্ছে, প্রোগ্রামারকে তার ট্র্যাক সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে প্রোগ্রামারদের শ্রম ও সময় নষ্ট এবং তাদের দায়দায়িত্ব (Responsibility) অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ প্রকার সিস্টেম (System) একটি আনস্ট্রাকচারড (Unstructured) সিস্টেম এবং এতে ফাইল ও ডাটা খুবই কাছাকাছি সম্পর্ক (Closely related) নিয়ে অবস্থান করে।
ফলে তাদেরকে মডিফিকেশন ও এক্সপানশন (Modification and expansion) করা খুবই অসুবিধাজনক। এ সিস্টেমে একই জাতীয় অনেক ফাইল থাকে। ফলে ফাইল ও ডাটা ডুপ্লিকেট (Duplicate) হয়ে থাকে।
নিচে কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেমের একটি সধারণ সিস্টেম দেখানো হলঃ
উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, প্রত্যেকটি ফাইলে একই ডাটা আলাদা আলাদাভাবে সংরক্ষিত আছে। এতে প্রসেসিং কার্যক্রম কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ।
নিম্নে কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং এর বিভিন্ন অসুবিধাগুলো উল্লেখ করা হলঃ
(ক) এতে ডাটা ডুপ্লিকেট (Duplicate) হয় বিধায় স্টোরেজ ডিভাইসে (Storage device) জায়গা বেশি লাগে।
(খ) এ প্রক্রিয়ায় ডাটায় প্রবেশ খুবই কঠিন হয়ে থাকে।
(গ) কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেমে ডাটার নিরাপত্তা নাই।
(ঘ) এতে ইনকনসিসটেন্সি (Inconsistency) অবস্থা বিরাজ করে।
(ঙ) এতে ডাটা আইসোলেশন (Data isolation) সমস্যা বিদ্যমান থাকে।
(চ) এ সিস্টেমে কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Central control system) বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
(ছ) এতে ব্যাকআপ ও রিকভারি (Backup and recovery) ব্যবস্থা নাই।
(জ) কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং-এ ডাটা ইনটিগ্রিটি (Data integrity) রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
(ঝ) এতে ডাটা ম্যানিপুলেশনের জন্য প্রোগ্রাম রচনা করা কঠিন।
(ঞ) এটি একটি আনস্ট্রাকচারড (Unstructured) সিস্টেম।
(ট) এতে অ্যাটোমিসিটি (Atomicity) সমস্যা বিদ্যমান থাকে।
কনভেনশনাল ফাইল সিস্টেমের অনেক অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও DBMS এর তুলনায় এতে কিছু কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। এ সুবিধাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
(ক) এতে প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর খরচ কম পড়ে।
(খ) কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় না বলে অনেক ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়, যা DBMS-এ পাওয়া যায় না।
(গ) ব্যাকআপ ও রিকভারির জটিলতা নাই, যা DBMS-এ বিদ্যমান।
কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম ও ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে এ পার্থক্যগুলো দেয়া হলঃ
কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম | ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম |
১। যদি কোন ফাইল প্রসেসিং-এ ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার না করে প্রচলিত অন্যান্য ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, তবে তাকে কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেম বলে। |
১। যে সফটওয়্যার সিস্টেমের সাহায্যে ডাটাবেসে জমাকৃত ডাটাকে অত্যন্ত সুবিধাজনকভাবে এবং দক্ষতার সাথে ম্যানিপুলেট করা যায়, তাকে ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বলে।
|
২। এতে ফাইলসমূহ বিভিন্ন ফরম্যাটে থাকে। | ২। এতে সমস্ত ফাইল একই ফরম্যাটে থাকে। |
৩। এ সিস্টেমে ডাটা ম্যানিপুলেট করার জন্যে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম রচনা করা হয়। |
৩। এ সিস্টেমে ডাটা ম্যানিপুলেট করার জন্যে শুধুমাত্র ডাটাবেস প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন। প্রোগ্রাম রচনা করা হয়।
|
৪। এতে ডাটা ডুপ্লিকেট (Duplicate) হওয়ার কারণে স্টোরেজ ডিভাইসে জায়গা বেশি লাগে। |
৪। এতে ডাটা ডুপ্লিকেট হয় না, ফলে স্টোরেজ ডিভাইসে জায়গা কম লাগে।
|
৫। কনভেনশনাল ফাইল প্রসেসিং সিস্টেমে ডাটা প্রবেশ খুবই কঠিন। |
৫। ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ডাটা প্রবেশ অত্যন্ত সহজ।
|
৬। এতে ডাটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। | ৬। এতে ডাটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত ভাল। |
৭। এ ব্যবস্থায় ডাটা ইনকনসিসটেন্সি সমস্যা বিদ্যমান। | ৭। এ ব্যবস্থায় ডাটা ইনকনসিসটেন্সি সমস্যা নাই। |
৮। এতে ডাটা আইসোলেশন সমস্যা আছে। | ৮। এতে ডাটা আইসোলেশন সমস্যা নাই। |
৯। এতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের খরচ কম পড়ে। |
১৯। এতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের খরচ বেশি পড়ে।।
|
১০। এ সিস্টেমে ডাটা ব্যাকআপ ও রিকভারির ব্যবস্থা নাই। |
১০। এ সিস্টেমে ডাটা ব্যাকআপ ও রিকভারির ব্যবস্থা বিদ্যমান।
|
১১। এটি একটি আনস্ট্রাকচারড সিস্টেম। | ১১। এটি একটি স্ট্রাকচারড সিস্টেম। |
১২। এতে কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নাই। | ১২। এতে কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে। |
১৩। এতে ডাটা ম্যানিপুলেশন এর জন্যে একটি সাধারণ প্রোগ্রাম রচনা করা কঠিন। |
১৩। এতে ডাটা ম্যানিপুলেশনের জন্যে প্রোগ্রাম রচনা করা সহজ।
|
১৪। এতে ডাটা’র ইনটিগ্রিটি (Integrity) রক্ষা করা যায় না। | ১৪। এতে ডাটা’র ইনটিগ্রিটি রক্ষা করা যায়। |
১৫। এতে ডাটা শেয়ার করা যায় না। | ১৫। এতে ডাটা শেয়ার (Share) করা যায়। |
১৬। এতে অ্যাটমিসিটি অসুবিধা বিদ্যমান। | ১৬। এতে অ্যাটমিসিটি (Atomicity) অসুবিধা নাই। |
আরও দেখুনঃ