আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – অল্টারনেটরের মার্জ-প্রাইস আরক্ষ ব্যবস্থা।যা “অল্টারনেটর এবং ট্রান্সফরমার প্রটেকশনের মূলনীতি” অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
অল্টারনেটরের মার্জ-প্রাইস আরক্ষ ব্যবস্থা
অল্টারনেটরের স্টেটর ওয়াইন্ডিং-এর ত্রুটিসমূহের প্রটেকশনের জন্য বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো মার্জ-প্রাইস প্রোটেকশন পদ্ধতি। মার্জ–প্রাইস পদ্ধতি অল্টারনেটরের অভ্যন্তরে সংঘটিত ত্রুটিসমূহ সর্বদা পরীক্ষা (Check) করে। অল্টারনেটরকে ত্রুটিমুক্ত রাখার জন্য সক্রিয় থাকে। মার্জ-প্রাইস পদ্ধতি মূলত ডিফারেন্সিয়াল সার্কুলেটিং কারেন্ট আরক্ষ ব্যবস্থার সংস্করণ মাত্র।
যদিও অল্টারনেটর সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তবুও ত্রুটিযুক্ত স্থানে কারেন্ট প্রবাহ চলতে থাকে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উৎপন্ন ভোল্টেজ দমন (Suppress) করা উচিত। কাজেই সার্কিট ব্রেকারের সাথে ফিল্ড কারেন্টকে ইন্টারলিংকিং-এর মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন করা যায়।
অল্টারনেটরের নিউট্রাল সাধারণত একটি রেজিস্ট্যান্সের মাধ্যমে আর্থ করা হয়। অল্টারনেটরে যদি আর্থ ফন্ট হয়, তবে এর ওয়াইন্ডিং-এর ভিতর দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট আর্থে প্রবাহিত হতে থাকে। এ কারেন্টের মানকে একটি নিরাপদ মানে সীমিত রাখার জন্য রেজিস্টরটি ব্যবহৃত হয়। এ অবস্থায় স্টারে সংযুক্ত সম্পূর্ণ স্টেটর ওয়াইন্ডিং পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতিতে রক্ষা করা সম্ভব নয়। স্টার পয়েন্টের নিকটবর্তী একটি অংশ (Zone) অরক্ষিত থাকবে।
এ অসুবিধা দূরীকরণের জন্য অল্টারনেটরের দুটি ফেজে দুটি রিলে সেট করা হয় এবং তৃতীয় ফেজে একটি ইম্পিডেন্স রিলে সংযোগ করে সমতা রক্ষা করা হয়। অতঃপর তিনটি ফেজকে স্টারে সংযুক্ত করে স্টার পয়েন্ট থেকে আর্থ ফন্ট রিলে সংযোগ করা হয়। যখন ওয়াইন্ডিং-এর সাথে কোনো আর্থ ফল্ট হয় তখন আর্থ ফন্ট রিলে ক্রিয়াশীল হয়ে সার্কিট ব্রেকারের মাধ্যমে অল্টারনেটরকে সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এ ব্যবস্থায় প্রতিটি ফেজ ওয়াইন্ডিং-এর দু’প্রান্তে দুটি রেটিং সম্পন্ন সিটি সেট বসানো থাকে। উভয় প্রাপ্তের সিটি স্টারে সংযুক্ত থাকে (সাধারণত স্টেটর ওয়াইন্ডিং স্টার সংযোগ দেওয়া থাকে, যদি ডেল্টা সংযোগ থাকে তবে ওয়াইন্ডিং প্রান্তে সিটি গুলো ডেল্টাতে এবং সার্কিট ব্রেকারের দিকে সিটিগুলো স্টার সংযুক্ত থাকে।
সি.টি.সমূহের ফেজ ও নিউট্রাল পাইলট তারের মাধ্যমে এমনভাবে সংযুক্ত থাকে, একে অপরের কারেন্ট প্রবাহকে বাধা প্রদান করে। সিটি সমূহের গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ একই ধরনের (Identical) হতে হবে। অন্যথায় একটি অবাঞ্ছিত কারেন্ট (Spill Current) অহেতুক রিলেকে অপারেট করাবে। পাইলট তার থেকে ইনভার্স টাইম ওভার সুইচগিয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন কারেন্ট রিলের সংযোগ দেওয়া হয়।
এখানে রিলেটি সাধারণত পাইলট তারের মধ্যস্থলে সংযোগ হওয়ার কথা। কিন্তু অনেক সময় পরিচালনার সুবিধার জন্য সার্কিট ব্রেকারের নিকটবর্তী সিটি-এর কাছাকাছি সংযোগ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দু’প্রান্ত থেকে রিলে সমান ভোল্টেজ পাওয়ার জন্য নিকটবর্তী সিটি থেকে রিলের মাঝে উচ্চ মাে রেজিস্ট্যান্স সিরিজে সংযুক্ত করা হয়, একে ব্যালান্সিং রেজিস্ট্যান্স বলে।
স্বাভাবিক অবস্থ দু’প্রান্তের সিটি-তে সমান কারেন্ট থাকে বিধায় রিলেতে প্রবাহিত কারেন্টের মান শূন্য থাকে। কিন্তু অস্বাভাবিক অবস্থায় অর্থাৎ, দুটি ফেজের মধ্যে বা ফেজ ও আর্থের মধ্যে ত্রুটি দেখা দিলে উভয় প্রান্তের সিটি-তে কারেন্টের ভারসাম্যতা নষ্ট হয় এবং অসম কারেন্টের লব্ধি সার্কুলেটিং কারেন্ট রিলেতে প্রবাহিত হয়। তখন রিলে অপারেট করে সার্কিট ব্রেকারকে ট্রিপ করে।
মার্জ-প্রাইস সিস্টেমের অসুবিধা :
(১) স্টেটর ওয়াইন্ডিং-এর একই ফেজের দুটি প্যাচ টার্নের মধ্যে শর্ট সার্কিট ফন্ট হলে এ ব্যবস্থা অকার্যকর। (২) প্রো (Through) ফন্টের জন্য এ ব্যবস্থা ফলপ্রসূ নয়। প্রটেক্টিভ জোনের বাইরের কোনো ফল্টকে থ্রো ফন্ট বলে।
আরও দেখুনঃ