এসি ভোল্টেজ উৎপাদন নীতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় এসি ভোল্টেজ উৎপাদন নীতি

এসি ভোল্টেজ উৎপাদন নীতি

এসি ভোল্টেজ উৎপাদন নীতি

এসি বা ডিসি উভয় ক্ষেত্রেই আর্মেচারে এসি উৎপন্ন হয়। তবে ডিসি জেনারেটরের ক্ষেত্রে উক্ত এসিকে কমুটেটরের মাধ্যমে ডিসি করা হয়। এসি বা ডিসি জেনারেটরে দুইভাবে ভোল্টেজ উৎপাদন করা যায় । যথা –

(ক) ফিল্ড স্থির রেখে আর্মেচারকে ঘুরিয়ে।

(খ) আর্মেচারকে স্থির রেখে ফিল্ডকে ঘুরিয়ে।

সাধারণত ডিসি জেনারেটরের ক্ষেত্রে প্রথম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আর এসি জেনারেটরের ক্ষেত্রে উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বৃহৎ জেনারেটরের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

নিচে একটি এসি জেনারেটরের ভোল্টেজ উৎপাদন প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হল :

 

এসি ভোল্টেজ উৎপাদন নীতি

 

৫.২ (a) নং চিত্রে একক প্যাচের একটি কয়েল একটি চুম্বকের উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর মাঝখানে অবস্থান দেখানো হয়েছে, যা অনায়াসে ঘুরতে পারে। কয়েলটি AB এবং CD এ দুটি কন্ডক্টরের সমন্বয়ে গঠিত। কয়েলটির দুপ্রান্ত দু’টি তামার রিং-এর (a এবং b) সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। রিং দু’টিকে পরস্পরের সাথে আইসোলেট করা হয়েছে।

তামার স্থির দু’টি ব্রাশ (1 এবং 2) ঘূর্ণায়মান রিং দু’টির গা ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে, যা কি না কয়েলে সৃষ্ট আবিষ্ট কারেন্ট বহিঃসার্কিটে আনবার জন্যে লীড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কয়েলের এ ব্যবস্থা, চৌম্বক ক্ষেত্র, রিং এবং ব্রাশ এসবগুলো মিলিয়ে একটি সাধারণ এসি জেনারেটর গঠিত হয়।

কার্যপ্রণালি :

ABCD কয়েলটিকে চৌম্বকক্ষেত্রের ভিতর বামাবর্তে (Anti-clockwise) স্থির কৌণিক বেগে ঘুরালে, কয়েলটির কন্ডাক্টরদ্বয় চৌম্বক ক্ষেত্র কর্তৃক উৎপন্ন ফ্লাক্সকে কর্তন করবে। ফলে কন্ডাক্টরে ই.এম.এফ আবিষ্ট হবে। আবিষ্ট ই.এম.এফ এর পরিমাণ কন্ডাক্টর কর্তৃক ফ্লাক্স কর্তনের হারের উপর নির্ভর করে।

কন্ডাক্টরে ঘূর্ণন বেড়ে গেলে কিংবা পোলের ফাক্সডেনসিটি বৃদ্ধি পেলে কন্ডাক্টর কর্তৃক ফ্লাক্স কর্তনের হার বেড়ে যায়। ফলে কন্ডাক্টরে ই.এম.এফও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং কন্ডাক্টরে উৎপন্ন ই.এম.এফ এর পরিমাণ নিম্নোক্ত সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা যায়-

(ক) ধরা যাক, ৫.৩ (I) নং চিত্রের অবস্থান হতে কয়েলটি প্রথমে ঘুরতে শুরু করলো। এ অবস্থানে কন্ডাক্টরের ঘূর্ণনের দিক ফ্লাক্সের সাথে সমান্তরালে থাকে। ফলে কন্ডাক্টর কর্তৃক কোন ফ্লাক্স কর্তন সম্ভবপর হয় না। সুতরাং ab এবং cd কন্ডাক্টরে আবিষ্ট ই.এম.এফ শূন্য, যা ওয়েভ ফরমে দেখানো হয়েছে।

(খ) কয়েলটি (I) নং অবস্থান হতে বামাবর্তে ঘুরতে আরম্ভ করলে কন্ডাক্টর কর্তৃক ফ্লাক্স কর্তনের হার বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সেই সাথে কয়েলে আবিষ্ট ই.এম.এফও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফ্লেমিং-এর দক্ষিণ হস্তবিধি অনুযায়ী কয়েলের কন্ডাক্টরদ্বয়ে ই.এম.এফ-এর অভিমুখ b হতে a এবং d হতে c-এর দিকে।

এ দু’টি ই.এম.এফ-ই যোগ করতে হবে। ফলে X-প্রান্ত পজিটিভ এবং Y- প্রান্ত নেগেটিভ হয়। কয়েলের (II) নং অবস্থানে ফ্লাক্স কর্তনের হার সর্বোচ্চ হয়, ফলে এতে আবিষ্ট ই.এম.এফ সর্বোচ্চ হয়।

 

এসি ভোল্টেজ উৎপাদন নীতি

 

(গ) কয়েলটি (II) নং অবস্থান হতে বামাবর্তে ঘুরতে শুরু করলে ফ্লাক্স কর্তনের হারও কমতে থাকে এবং সেই সাথে আবিষ্ট ই.এম.এফও হ্রাস পেতে শুরু করে। আবিষ্ট ভোল্টেজের পোলারিটি আগের মতোই রয়ে গেল, অর্থাৎ X- প্রান্ত পজিটিভ এবং Y- প্রান্ত নেগেটিভ । (III) নং অবস্থানে ফ্লাক্স কর্তনের হার শূন্য, ফলে আবিষ্ট ই.এম.এফ-ও কমতে কমতে শূন্যতে এসে দাঁড়ায়।

কয়েলটি 0° হতে 180° পর্যন্ত ঘূর্ণনের সময়, আবিষ্ট ই.এম.এফ শূন্য হতে সর্বোচ্চ মানে গিয়ে পৌঁছে এবং পরে কমতে কমতে সর্বোচ্চ মান হতে শূন্যতে এসে দাঁড়ায়, যা ৫.৩ নং চিত্রে ওয়েভ ফরমে দেখানো হয়েছে ।

(ঘ) আবার যখন কয়েলটি (III) নং অবস্থান হতে বামাবর্তে ঘুরতে শুরু করে, তখন ফ্লাক্স কর্তনের হার বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে আবিষ্ট ই.এম.এফ ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু এবারে কয়েলের আবিষ্ট ই.এম.এফ-এর অভিমুখ উল্টে যায়, অর্থাৎ এটি এখন a হতে b-এর দিকে এবং c হতে d-এর দিকে ধাবিত হয়। সেই কারণে X-প্রান্ত এখন নেগেটিভ এবং Y-প্রান্ত পজিটিভ হয়। (IV) নং অবস্থানে আবিষ্ট ই.এম.এফ আবারও সর্বোচ্চ হয়, কিন্তু নেগেটিভ দিকে।

(ঙ) কয়েলটি আবার যখন (IV) নং অবস্থান হতে বামাবর্তে ঘুরতে থাকে, তখন ফ্লাক্স কর্তনের হার কমতে থাকে এবং সেই সাথে আবিষ্ট ই.এম.এফ কমতে শুরু করে। (V) নং অবস্থানে এটি পুরোপুরি শূন্যতে এসে দাঁড়ায়।

১। কয়েলটি 180° হতে 360° পর্যন্ত ঘূর্ণনের সময়, আবিষ্ট ই.এম.এফ শূন্য হতে বিপরীত দিকে (অর্থাৎ নেগেটিভ দিকে) সর্বোচ্চ মানে গিয়ে পৌঁছে এবং পরে সর্বোচ্চ মান হতে কমতে কমতে শূন্যতে এসে দাঁড়ায়, যা ৬.৩ নং চিত্রে ওয়েভ ফরমে দেখানো হয়েছে।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনা হতে আমরা এ ধারণায় পৌঁছাতে পারি যে, অর্ধ-ঘূর্ণনের জন্যে (অর্থাৎ 0° হতে 180° কয়েলের X এবং Y-প্রাস্তদ্বয় সময়ে সময়ে পোলারিটি পরিবর্তন করে। কয়েলের পর্যন্ত) X-প্রান্ত পজিটিভ এবং Y-প্রান্ত নেগেটিভ হয়। পরবর্তী অর্ধঘূর্ণনের জন্যে (অর্থাৎ180° হতে 360°. পর্যন্ত) X- প্রান্ত নেগেটিভ এবং Y-প্রান্ত পজিটিভ হয়।

২। একটি সার্কিটে যদি এ ধরনের অল্টারনেটিং (পরিবর্তনশীল) ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়, তবে কারেন্ট 0° হতে 180° পর্যন্ত প্রথমে একদিকে এবং পরে 180° হতে 360° পর্যন্ত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় । একেই অল্টারনেটিং কারেন্ট বা এসি. বলা হয়।

আরও দেখুন :

Leave a Comment