আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-চার্জ কন্ট্রোলার।যা একটি সোলার পাওয়ার সিস্টেম প্রস্তুত এর অন্তর্ভুক্ত।
চার্জ কন্ট্রোলার
চার্জ -কন্ট্রোলার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা চার্জ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। চার্জ- কন্ট্রোলার মূলত একটি ভোল্টেজ রেগুলেটর। সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেমে চার্জ -কন্ট্রোলার সৌর প্যানেলের ভোল্টেজ ও কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
সৌর প্যানেল সাধারণত ১৮-২১ ভোল্ট উৎপন্ন করে এবং ১২ ভোল্টের ব্যাটারিকে পূর্ণ চার্জিত অবস্থায় রাখতে হলে ১৪–১৪.৫ ভোট প্রয়োজন। চার্জ-কন্ট্রোলার এ ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে। সৌর প্যানেল থেকে প্রতিদিন সরাসরি চার্জ-কন্ট্রোলারের ভিতর দিয়ে চার্জ এসে ব্যাটারিতে জমা হয়। ব্যাটারি থেকে কন্ট্রোলারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ডিসি লোডে সরবরাহ করা হয়।
যদি এ জমাকৃত চার্জের পরিমাণ প্রতিদিনের খরচ করা চার্জের পরিমাণের চেয়ে বেশি হয় তবে ব্যাটারি ওভারচার্জ হতে থাকবে। ফলে ব্যাটারি গ্যাসিং হবে এবং এর জীবনীশক্তি কমে যাবে। আবার যদি প্রতিদিনের জমাকৃত চার্জের পরিমাণের তুলনায় প্রতিদিনের খরচকৃত চার্জের পরিমাণ বেশি হয় তবে ব্যাটারি ওভার ডিসচার্জ হবে।
এমতাবস্থায় ব্যাটারির আয়ুকাল কমে যাবে। চার্জ -কন্ট্রোলার ব্যাটারির চার্জ এবং ডিসচার্জের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। অর্থাৎ চার্জ -কন্ট্রোলার ব্যাটারিকে অতিরিক্ত চার্জ এবং ডিসচার্জ হতে রক্ষা করে। সোলার সিস্টেমকে রক্ষা করে। এছাড়া সোলার হোম সিস্টেমকে মনিটরিং করার জন্য চার্জ -কন্ট্রোলারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

দিনের বেলা ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ (Full charge) হয়ে গেলে চার্জ -কন্ট্রোলার ব্যাটারিতে চার্জ প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। অনুরূপভাবে একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত ডিসচার্জ হয়ে গেলেও সেটা ব্যাটারি থেকে চার্জ প্রবাহ বন্ধ করে দেয় অর্থাৎ লোড বন্ধ করে দেয়।
সাধারণত ১২ ভোল্ট ডিসি ভোল্টেজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভোল্টেজকে চার্জ-কন্ট্রোলারের “আপার কাট অফ পয়েন্ট” (যে ভোল্টেজে চার্জিং বন্ধ করে দেয়) এবং “লোয়ার কাট অফ পয়েন্ট” (যে ভোল্টেজে ডিসচার্জ বন্ধ করে দেয়) বলে। উল্লেখ্য চার্জ-কন্ট্রোলার এ পুরো কাজটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে থাকে।
চার্জ-কন্ট্রোলার সাধারণত নিম্নোক্ত “আপার কাট অফ পয়েন্ট” এবং “লোয়ার কাট অফ পয়েন্ট” এ ডিজাইন করা থাকে-
১। “আপার কাট অফ পয়েন্ট” (HVD) = ১৪.৩ + ০.২ ভোল্ট,
২। “লোয়ার কাট অফ পয়েন্ট” (LVD) = ১১.৬ থেকে ১১.৭ ভোল্ট। চার্জ-কন্ট্রোলার ব্যাটারি এবং প্যানেলের সঙ্গে প্যারালালে সংযোগ করা হয়। নিম্নে সোলার চার্জ-কন্ট্রোলারের ব্লক ডায়াগ্রাম দেখানো হলো সৌর চার্জ-কন্ট্রোলারের কর্মরত অবস্থায় ব্লক ডায়াগ্রাম-
চার্জ কন্ট্রোলার কেন ব্যবহার করা হয় : চার্জ-কন্ট্রোলার মূলত একটি ভোল্টেজ রেগুলেটর। সৌর বিদ্যুৎ হতে যে কারেন্ট এবং ভোল্টেজ পাওয়া যায়, তাকে রেগুলেট বা Constant রাখতে এটি ব্যবহৃত হয়। ফলে ব্যাটারি অতিরিক্ত চার্জিং এবং ডিসচার্জিং থেকে রক্ষা পায়।
সাধারণত দিনের বেলার একটি সোলার প্যানেল ১৮-২১ V তৈরি করে এবং এ ভোল্টেজে সরাসরি ব্যাটারিকে চার্জ করলে ব্যাটারি অতিরিক্ত ওভারচার্জ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্যানেলের ভোল্টেজকে ব্যাটারির উপযোগী করে চার্জ করাই হচ্ছে এর মূল কাজ। তা ছাড়া ব্যাটারি যেন অতিরিক্ত ডিসচার্জ হয়ে নষ্ট না হয় সেজন্যও চার্জ-কন্ট্রোলার প্রয়োজন ।
চার্জ কন্ট্রোলারের গঠন : সৌর প্যানেল, ব্যাটারি ও লোডের সাথে সমান্তরালভাবে চার্জ-কন্ট্রোলার লাগানো হয় । যখন ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হয়ে যায় তখন এ কন্ট্রোলার সৌর প্যানেলকে শর্ট করে (টিগারিং পদ্ধতিতে) দিয়ে ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে। এ অবস্থায় একটি ব্লকিং ডায়োড লাগানো থাকে, যাতে করে ব্যাটারি প্যানেলকে লোড ভেবে উল্টো দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে না পারে।
ব্যাটারি চার্জিং-এর সময় এ ডায়োডের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ায় ডায়োড গরম হয় এবং বিদ্যুৎ অপচয় হয়। তা ছাড়াও প্যানেলকে শর্ট করে ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয় বলে সুইচটির মাঝ দিয়ে অত্যধিক কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ফলে সিরিজ কন্ট্রোলারের চেয়ে শান্ট কন্ট্রোলার বেশি গরম হয় এবং প্যানেল উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও দেখুনঃ